ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ
ﺍﻟﺤﻤﺪ ﻟﻠﻪ ﻭﻛﻔﻰ ﻭﺍﻟﺼﻠﻮﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻰ ﺳﻴﺪ ﺍﻻﻧﺒﻴﺎﺀ ﻣﺤﻤﺪ ﺍﻟﻤﺼﻄﻔﻰ ﻭﻋﻠﻰ ﺍﻟﻪ ﻭﺍﺻﺤﺎﺑﻪ ﺍﻭﻟﻰ ﺍﻟﺼﺪﻕ ﻭﺍﻟﺼﻔﺎﺀ-
যে সমস্ত বরকতময় রজনীতে আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের প্রতি করুণার দৃষ্টি দান করে থাকেন, শবে বরাত তারই অন্যতম। রাতটি হলো শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সলফে সালেহীন এবং বিজ্ঞ মনীষীগণ এ রাতটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পালন করেছেন। অনুরূপভাবে যুগে যুগে মুসলমানগণ এরই ধারাবাহিকতায় এ রাতটি পালন করে আসছেন। আরবী ‘শা’বান’ ( ﺷﻌﺒﺎﻥ), শব্দটি একবচন, এর বহুবচন হল ‘শা’বানাত ( ﺷﻌﺒﺎﻧﺎﺕ), শা’আ-বীন (ﺷﻌﺎﺑﻨﻴﻦ ), শা’বানিয়্যী-ন ( ﺷﻌﺒﺎﻧﻴﻦ )। এটা ﺑﺎﺏ ﺗﻔﻌﻞ - ﺗﺸﻌﺐ থেকে গৃহীত। এর অর্থÑ বিক্ষিপ্ততা ছড়ানো ও শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট হওয়া। ইমাম রাফে’ হযরত আনাস (রা:)-র উক্তি লিখেছেন, হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, এ মাসের নাম ‘শা’বান’ এ জন্য রাখা হয়েছে যে, এ মাসে রোযা পালনকারীর সাওয়াব, মঙ্গল ও সৌন্দর্য শাখা-প্রশাখার ন্যায় বিস্তার লাভ করে, যাতে রোযাদার জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে। আরবী ১২ মাসের অষ্টম মাস শাবান। শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রটি কোরআনের ভাষায়- ﻟﻴﻠﺔ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ (লাইলাতুম মুবারাকা) বা বরকতময় রজনী, আর হাদীসের ভাষায়- ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ (লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান) বা শাবানের মধ্য রজনী। তাফসীরের ভাষায় ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺼﻚ (লাইলাতুছ্ ছাক) বা সনদপ্রাপ্তির রাত্রি, ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺠﺎﺓ (লাইলাতুন নাজাহ) তথা মুক্তি রজনী। আর আমাদের উপমহাদেশে যাকে শবে বরাত বলে আমরা জানি তা ফারসী ভাষা থেকে উদ্ভূত। শব ( ﺷﺐ) বা রাত ও বরাত ( ﺑﺮﺍﺕ) বা ভাগ্য, পবিত্রতা, নাজাত, মুক্তি, ত্রাণ ইত্যাদি। এছাড়াও এর আরো অনেক নাম রয়েছে। যেমন- ﺍﻟﺒﺮﺍﺀﺓ ﻟﻴﻠﺔ বা পাপ মুক্তির রজনী, ﺍﻟﻘﺴﻤﺔ ﻟﻴﻠﺔ বা বন্টনের রজনী, ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺘﻜﻔﻴﺮ বা গুণাহের কাফ্ফারার রাত, ﺍﻻﺟﺎﺑﺔ ﻟﻴﻠﺔ বা দোয়া কবুলের রাত, ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﻟﻴﻠﺔ বা ফেরেস্তাদের ঈদের রাত, ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺠﺎﺀﺯﺓ বা প্রতিদানের রাত, ﺍﻟﺸﻔﺎﻋﺔ ﻟﻴﻠﺔ বা সুপারিশের রাত, ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻐﻔﺮﺍﻥ বা ক্ষমার রাত, ﺍﻟﺘﻌﻈﻴﻢ ﻟﻴﻠﺔ বা সম্মানের রাত, ﺍﻟﺮﺟﺤﺎﻥ ﻟﻴﻠﺔ বা পূণ্যের পাল্লা ভারি হওয়ার রাত, ﺍﻟﻌﺘﻖ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻟﻴﻠﺔ বা দোযখ থেকে মুক্তির রাত। পবিত্র কুরআন ও নির্ভরযোগ্য মুফাস্সিরগণের দৃষ্টিতে পবিত্র শবে বরাত ঃ মধ্য শাবানের রাত্রি যা কোরআনের পরিভাষায় লাইলাতুম মুবারাকা নামে পরিচিত। এ রাতটির মর্যাদা, অস্তিত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব কোরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। ইদানিং একটি ভ্রান্ত-মতবাদী দল বিভিন্ন মিডিয়ায় তাদের বক্তব্য, আলোচনায় এবং লেখনীতে সর্বদা এ কথা বলে বেড়াচ্ছে যে, লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাতের নির্ভরযোগ্য কোন দলীল কোরআন ও হাদীস শরীফে নেই। যা আছে তাও মাওজু তথা বানোয়াট বা জাল কিংবা সাংঘাতিক পর্যায়ের দুর্বল। অথচ, দেখুন পবিত্র কোরআনে কারীম ও নির্ভরযোগ্য তাফসিরের কিতাবের ভাষ্য- সূরা দুখানের ১-৪ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন ﺣﻢ - ﻭﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﺍﻟﻤﺒﻴﻦ - ﺇﻧﺎ ﺃﻧﺰﻟﻨﺎﻩ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ - ﺇﻧﺎ ﻛﻨﺎ ﻣﻨﺬﺭﻳﻦ - ﻓﻴﻬﺎ ﻳﻔﺮﻕ ﻛﻞ ﺃﻣﺮ ﺣﻜﻴﻢ - হা-মীম, এ স্পষ্ট কিতাবের শপথ! নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে বন্টন করে দেওয়া হয় প্রত্যেক হিকমতের কাজ। এ আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে বিশ্ব বরেণ্য নির্ভরযোগ্য মুফাস্সিরগণের মতামত ঃ ১. তাফসীরে জালালাইন শরীফে ৪১০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে- ﺍﻥ ﺍﻧﺰﻟﻨﺎﻩ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ ﻫﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﺍﻭ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻧﺰﻝ ﻓﻴﻬﺎ ﻣﻦ ﺍﻡ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺍﻟﺴﺎﺑﻌﺔ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﺍﻧﺎ ﻛﻨﺎ ﻣﻨﺬﺭﻳﻦ- নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। আর বরকতময় রাত হল লাইলাতুল ক্বদর (ক্বদরের রাত) অথবা লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান (শাবানের মধ্য রাত তথা শবে বরাত)। কেননা এই রাতে উম্মুল কিতাব (কোরআন শরীফ) ৭ম আসমান থেকে দুনিয়ার আসমানে (১ম আসমান) নাযিল হয়েছে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। ২. তাফসীরে তাবারী শরীফ পৃষ্ঠা-২২, খন্ড ১০ -এ বর্ণিত আছে- ﻋﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺳﻮﻓﺔ , ﻋﻦ ﻋﻜﺮﻣﺔ ﻓﻰ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﺒﺎﺭﻙ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ ( ﻓﻴﻬﺎ ﻳﻔﺮﻕ ﻛﻞ ﺃﻣﺮ ﺣﻜﻴﻢ ) ﻗﺎﻝ : ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻳﺒﺮﻡ ﻓﻴﻬﺎ ﺃﻣﺮ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺗﻨﺴﺦ ﺍﻷﺣﻴﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻷﻣﻮﺍﺕ ﻭﻳﻜﺘﺐ ﺍﻟﺤﺎﺝ ﻓﻼ ﻳﺰﺍﺩ ﻓﻴﻬﻢ ﺃﺣﺪ , ﻭﻻ ﻳﻨﻘﺺ ﻣﻨﻬﻢ ﺃﺣﺪ . ﻛﺬﺍ ﺃﺧﺮﺝ ﺍﺑﻦ ﺟﺮﻳﺮ ﻭﺍﺑﻦ ﻣﻨﺬﺭ ﻭﺍﺑﻦ ﺃﺑﻰ ﺣﺎﺗﻢ ﻭﻛﺬﺍ ﻓﻰ ﺭﻭﺡ ﺍﻟﻤﻌﺎﻧﻰ - আল্লাহ তায়ালার বাণী ﻓﻴﻬﺎ ﻳﻔﺮﻕ ﻛﻞ ﺃﻣﺮ ﺣﻜﻴﻢ এর তাফসীরে বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইকরামা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মধ্য শাবানের রাত্রিতে বছরের সকল ব্যাপার চূড়ান্ত করা হয়, জীবিত ও মৃতদের তালিকা লেখা হয় এবং হাজীদের তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকা থেকে একজনও কমবেশি হয় না। অনুরূপ বর্ণনা করেছেন ইবনুল মুনজির ও ইবনু আবি হাতেম (রা:)। এরূপ রুহুল মায়ানীতেও আছে। ৩. তাফসীরে কুরতুবী পৃষ্ঠা-১২৬, খন্ড ১৬ এ বর্ণিত আছে :ﻭﻟﻬﺎ ﺃﺭﺑﻌﺔ ﺃﺳﻤﺎﺀ : ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻛﺔ , ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺒﺮﺍﺀﺓ , ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺼﻚ , ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ - ইমাম কুরতুবী (রা:) বলেন, এ রাতের ৪ টি নাম আছে- ক. লাইলাতুম মুবারাকা, খ.লাইলাতুল বারাআত গ. লাইলাতুছ্ ছাক, ঘ. লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান। ৪. তাফসীরে বাগভী পৃষ্ঠা-২২৮, খন্ড ৭ -এ বর্ণিত আছে :
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﺃﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻘﻀﻰ ﺍﻷﻗﻀﻴﺔ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ , ﻭﻳﺴﻠﻤﻬﺎ ﺇﻟﻰ ﺃﺭﺑﺎﺑﻬﺎ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ - নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বিষয়ের চূড়ান্ত ফয়সালা করেন শবে বরাতের রাতে এবং তা সংশ্লিষ্ঠ দায়িত্ববান ফেরেস্তাদের কাছে ন্যস্ত করেন শবে ক্বদরের রাতে। এ ছাড়াও ১.তাফসীরে ইবনু আবি হাতেম ১২তম খন্ড, ২১৪ পৃষ্ঠা। ২. রুহুল মায়ানী ২৫তম খন্ড, ১১০ পৃষ্ঠা। ৩. বাহরুল মুহীত, ৮ম খন্ড, ২৪ পৃষ্ঠা। ৪. ফাতহুল কাদীর ৪র্থ খন্ড, ৫৭০ পৃষ্ঠা। ৫. যাদুল মাছির ৭ম খন্ড, ১২২ পৃষ্ঠা। ৬. বাগভী, ৭ম খন্ড, ২২৭ পৃষ্ঠা। ৭. নাসাফী ৩য় খন্ড, ৩০২ পৃষ্ঠা। ৮. নিসাপুরী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৪৯০ পৃষ্ঠা। ৯. কাশ্শাফ ৪র্থ খন্ড, ২৭২ পৃষ্ঠা। ১০. কান্যুল ঈমান, ১১. নুকুত ওয়াল উয়ূন, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৪৯০ পৃষ্ঠা। ১২. দুররে মানসূর ১২তম খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠায় ১৫ টি হাদীস রয়েছে। ১৩. খাজেন, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৪৩ পৃষ্ঠা। ১৪. আল বোরহান, ২৩তম খন্ড, ১১৬ পৃষ্ঠা। ১৫. রাযী, ১৭তম খন্ড, ১৩৩ পৃষ্ঠা। ১৬. আলুসী, ১৮তম খন্ড, ৪২৪ পৃষ্ঠা। ১৭. জালালাইন ৪১০ পৃষ্ঠা। ১৮. হাক্কী, ৫ম খন্ড, ৬ পৃষ্ঠা। ১৯. কুরতুবী, ১৬তম খন্ড, ১২৭ পৃষ্ঠা। ২০. সাভী ২য় খন্ড, ৩০২ পৃষ্ঠা। ২১. ইবনে কাসীর, ৭ম খন্ড, ২৪৬ পৃষ্ঠা। ২২. জামিউল বায়ান ২০তম খন্ড, ১৫১ পৃষ্ঠা। ২৩. নুসূকী ৩য় ও ৪র্থ খন্ড, ১২০ পৃষ্ঠা। ২৪. কাদের ৪র্থ খন্ড, ১৬৬ পৃষ্ঠা। ২৫. মাযহারী ৮ম খন্ড, ৩৬৮ পৃষ্ঠা। ২৬. কাসেমী ৮ম খন্ড, ৩৬৮ পৃষ্ঠা। ২৭. কোশাইরী ৩য় খন্ড, ১৯০ পৃষ্ঠা, ২৮. আবু সৌউদ ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৩০ পৃষ্ঠা। ২৯. আয়াতুল আহকাম ৪র্থ খন্ড, ১৬৬ পৃষ্ঠা। ৩০. রুহুল বয়ান ৩য় খন্ড, ৫৯৮ পৃষ্ঠা। ৩১. কাশেফুল আসরার, ৯ম খন্ড, ৯৪-৯৮ পৃষ্ঠা। ৩২. মাওয়ারদী, ৪র্থ খন্ড, ১০২ পৃষ্ঠা। ৩৩. সিরাজুম মুনির, ৩য়, খন্ড, ৪৫৮ পৃষ্ঠা। এ রকম ২৩১ টি তাফসীর গ্রন্থে লাইলাতুম মোবারাকা বলতে শবে ক্বদরের পাশাপাশি মধ্য শাবানের অর্থাৎ ১৪ শাবানের রাতের কথাও গুরুত্ব সহকারে বলা হয়েছে। তাফসিরে রুহুল বয়ান ৩য় খন্ড ৫৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে- আল্লাহ পাক জাল্লা শানুহু উক্ত রুজি রোজগার ও রিজিক বন্টনের আনুষ্ঠানিক দায়িত্বভার হযরত মিকাঈল (আঃ) এর উপর, কার্যসমূহ ও বন্দেগীর দায়িত্ব ভার ১ম আসমানের ফেরেস্তা হযরত ইসরাইল (আঃ) এর উপর, বিপদাপদ ও দুঃখ দুর্দশায় দূরীকরনের দায়িত্বভার হযরত আযরাইল (আঃ) এর উপর অর্পণ করেন। শবে বরাত যে মুসলিম উম্মার জন্য একটি বরকতময় ও ফজিলত পূর্ণ রাত্রি এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। সমস্ত মুফাসসিরীন ও মুহাদ্দিসীনে কেরাম এ রাতকে একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন। গাউসূল আজম বড় পীর শেখ সৈয়্যদ আবূ মুহাম্মদ আবদুল কাদের জিলানী (র:) তদ্বীয় কিতাব “গুনিয়াতুত্ত্বা লেবীন” এর ১ম খন্ডে-এ ৬৮৪ পৃষ্টায় উল্লেখ করেন-
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﺣﻢ ﻭﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﺍﻟﻤﺒﻴﻦ ﺍﻧﺎ ﺍﻧﺰﻟﻨﺎﻩ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﺣﻢ ﻗﻀﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎ ﻫﻮ ﻛﺎﺋﻦ ﺍﻟﻰ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﻤﺔ ﻭﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﺍﻟﻤﺒﻴﻦ ﻳﻌﻨﻰ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ - ﺍﻧﺎ ﺍﻧﺰﻟﻨﺎﻩ ﻳﻌﻨﻰ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ ﻫﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻭﻫﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺒﺮﺃﺓ ﻭﻗﺎﻝ ﺫﺍﻟﻚ ﺍﻛﺜﺮ ﺍﻟﻤﻔﺴﺮﻳﻦ - অর্থাৎ:- আল্লাহ পাক এরশাদ করেন- হা-মী-ম প্রকাশ্য মহাগ্রন্থ আল কোরআনের শপথ- যে কোরআনকে আমি মুবারক (বরকতময়) রাতে নাযিল করেছি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) এর তাফসীর প্রসংগে বলেন- কিয়ামত পর্যন্ত যা হওয়ার আছে- তা আল্লাহ পাক ফয়সালা করে দিয়েছেন। শপথ উজ্জল প্রকাশ্য গ্রন্থ তথা কোরআনের যাকে আমি বরকতময় রাতে অর্থাৎ শাবান মাসের মধ্যবর্তী রজনীতে নাযিল করেছি- ঐ ১৫ শাবানের রাতটি হচ্ছে লাইলাতুল বরাআত- এবং অধিকাংশ মোফাসসিরীনে কেরাম এ মত পোষন করেছেন। হুজুর গাউছে পাক (র:) তদ্বীয় কিতার “গুনিয়াতুত্ত্বা লেবীন” এর ১ম খন্ড-এ ১৮৭ পৃষ্টায় আরো বলেন-
ﻣﻨﻬﺎ ﺳﻤﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺒﺮﺃﺓ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ ﻟﻤﺎ ﻓﻴﻬﺎ ﻣﻦ ﻧﺰﻭﻝ ﺍﻟﺮﺣﻤﺔ ﻭﺍﻟﺒﺮﻛﺔ ﻭﺍﻟﺨﻴﺮ ﻭﺍﻟﻌﻔﻮ ﻭﺍﻟﻐﻔﺮﺍﻥ - অর্থাৎ ঃ লাইলাতুল বরাতকে এ কারণে “মুবারক” তথা বরকতময় বলা হয়েছে- যেহেতু এ পবিত্র রাতে দুনিয়াবাসীদের জন্য অফুরন্ত রহমত, বরকত ও কল্যাণ নাযিল করা হয়ে থাকে। অধিকন্তু পৃথিবীবাসী মুসলিমদেরকে এ রাতে ক্ষমা করা হয়ে থাকে। মালেকী মাযহাবের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা শেখ আহমদ ছাভী (র:) সূরা দুখানের তাফসীরে তদ্বীয় তাফসীরে ছাভী-র ৪র্থ খন্ডের ৪০ পৃষ্টায় উল্লেখ করেন-
( ﻗﻮﻟﻪ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ) ﻫﻮ ﻗﻮﻝ ﻋﻜﺮﻣﺔ ﻭﻃﺎﺋﻔﺔ ﻭﻭﺟﻪ ﺑﺎﻣﻮﺭ ﻣﻨﻬﺎ ﺍﻥ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻟﻬﺎ ﺍﺭﺑﻌﺔ ﺍﺳﻤﺎﺀ ﺍﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻛﺔ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺒﺮﺃﺓ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺮﺣﻤﺔ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺼﻚ ﻭﻣﻨﻬﺎ ﻓﻀﻞ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩﺓ ﻓﻴﻬﺎ - অর্থাৎ ঃ ঐ বরকতময় রজনী হচ্ছে অর্ধ শাবানের রাত্রি (মোফাসসিরীনে কেরামের অন্যতম মোফাসসির) বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইকরামা (রা:) ও অন্যান্য তাফসীরকারকদের একদলের অভিমত। তারা এর কয়েকটি কারণও উল্লেখ করেছেন। শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত্রির চারটি নামে নামকরণ করেছেন। যেমন- ১। লাইলাতুম মুবারাকাহ- বরকতময় রজনী। ২। লাইলাতুল বারাআত- মুক্তি বা নাজাতের রাত্রি। ৩। লাইলাতুর রহমাহ- রহমতের রাত্রি। ৪। লাইলাতুছ ছাক- সনদপ্রাপ্তির রাত্রি ইত্যাদি। হাদীসের আলোকে লাইলাতুল বরাতের দলীল ঃ পবিত্র শাবান মাস। এ মাসে রোজা পালনের গুরুত্বের উপর বোখারী ও মুসলিম, তিরমিযীসহ অনেক বিশুদ্ধ হাদিসগ্রন্থের বর্ণনা আমরা লক্ষ্য করেছি। অনুরূপভাবে এ মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত তথা শবে বরাত সম্পর্কে ছিহাহ্ ছিত্তাহর উল্লেখযোগ্য কিতাবাদিসহ নানা নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে প্রমাণ মেলে: দলীল নং-০১
ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﻣﻮﺳﻰ ﺍﻻﺷﻌﺎﺭﻯ ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻟﻴﻄﻠﻊ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻟﺠﻤﻴﻊ ﺧﻠﻘﻪ ﺍﻻ ﻟﻤﺸﺮﻙ ﺍﻭ ﻣﺸﺎﺣﻦ ) ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ( হযরত আবূ মূসা আশয়ারী (রা:) রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান- মধ্য শাবানের রাত্রিতে আল্লাহ পাক রহমতের তাজাল্লী ফরমান এবং তার সমস্ত বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতা পোষণকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না। (ইবনে মাজাহ শরীফ পৃ. ১০০ হাদীস নং-১৩৮৯, মিশকাত শরীফ-১১৫ পৃষ্ঠা) এছাড়াও হাদীসটি যেসব গ্রন্থে বর্ণিত আছে- ইমাম বায়হাকী (র:) “শুয়াবুল ঈমান ৩ য় খন্ড পৃ. ৩৮২, “ফাজায়েলুল আওকাত” এর পৃ.-১৩৩, হাদীস নং-২৯। “মিসবাহুজ জুজাযাহ” এর ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা-৪৪২ হাদীস নং-৪৮৭, “আত তারগীব ওয়াত তারহীব” এর ৩য় খন্ড, হাদীস নং-২৭১৮। আহলে হাদীস তথা লা-মাযহাবীদের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নাসির উদ্দীন আলবানীর “সিলসিলাতুল আহাদিছে ছহিহা” এর ৩য়-খন্ড, ১৩১ পৃষ্ঠাসহ আরো ৫ টি হাদীস রয়েছে। আল্লামা শেখ আবদুল হক মোহাদ্দেস দেহলভী (রা:) এ ধরনের কতিপয় হাদীস শরীফ উল্লেখ পূর্বক তদ্বীয় মা-ছাবাতা বিচ্ছুন্নাহ কিতাবের ৩৫৪ পৃষ্ঠায় মুশাহিন শব্দের ব্যাখ্যায় লিখেন-
ﺍﻟﻤﺸﺎﺣﻦ ﺍﻟﻤﺬﻛﻮﺭ ﻓﻰ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺻﺎﺣﺐ ﺍﻟﺒﺪﻋﺔ ﺍﻟﺘﺎﺭﻙ ﻟﻠﺠﻤﺎﻋﺔ - হাদীস শরীফে যে “মুশাহিন” শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে- এর অর্থ হলো বেদাতীগণ, যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত হতে বহি®কৃত হয়েছে। এই বেদআত পন্থী ৭২ ফেরকাকে আল্লাহ পাক এ রাত্রিতে মার্জনা করবেন না। অলীকুল সম্রাট গাউসূল আজম বড়পীর শেখ সৈয়্যদ আবূ মুহাম্মদ আবদুল কাদের জিলানী (র:) “গুনিয়াতুত্ত্বা লেবীন” নামক কিতাবে শায়েখ আবু নছর সনদ পরস্পরায়, -আমীরুল মোমেনীন মাওলা আলী (রা:) হতে একই ধরনের হাদীস উল্লেখ করে- বর্ণনা করেছেন যার ভাবার্থ প্রায় একই ধরনের। দলীল নং-০২
ﻋﻦ ﻣﻌﺎﺫ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻳﻄﻠﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻟﺠﻤﻴﻊ ﺧﻠﻘﻪ ﺍﻻ ﻟﻤﺸﺮﻙ ﺍﻭ ﻣﺸﺎﺣﻦ হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মধ্য শাবানের রাত্রিতে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে জালওয়া রাখেন, অত:পর তাঁর সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতা পোষনকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না। (ইমাম বায়হাকী “শুয়াবুল ঈমান” এর হাদীস নং-৩৮৩৩) এছাড়াও হাদীসটি যেসব গ্রন্থে বর্ণিত আছে- ইমাম ইবন্ হিব্বান এর সহীহ “ইবন হিব্বান” এর হাদীস নাম্বার ১৯৮০, পৃষ্ঠা-৩৫৫, খন্ড-১৩। আহলে হাদীস তথা লা-মাযহাবীদের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নাসির উদ্দিন আলবানীর “সিলসিলাতুল আহাদিস আসসাহীহা”এর ৩য় খন্ড, ১৩৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১১৪৪। ইমাম তাবারানী তার বিখ্যাত কিতাব “মুজামুল কাবীর” এর ১৫ খন্ড, ২২১ পৃষ্ঠা। “ফাজায়েলুল আওকাত” এর হাদীস নং-২২, পৃষ্ঠা-১১৯। “আত তারগীব ওয়াত তারহীব” এর ২য় খন্ড ২৪১ পৃষ্ঠা। “মাজমাউয যাওয়ায়েদ” এর ৮ম খন্ড ৬৫ পৃষ্ঠা। “আল হিলয়াহ” এর ৫ম খন্ড, পৃ.-১৯১। “আসসুন্নাহ” এর হাদীস নং-৫১২। উল্লেখ্য যে, বায়হাকী শরীফে বর্ণিত হাদীসটি অন্যান্য ওলামায়ে কেরাম ছাড়াও শবে বরাতের বিরুদ্ধবাদী আলেমও সহীহ হাদীস হিসেবে বর্ণনা করেছেন। দলীল নং-০৩ মশকাত শরীফে ১১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻫﻞ ﺗﺪﺭﻳﻦ ﻣﺎ ﻓﻰ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﻳﻌﻨﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻗﺎﻟﺖ ﻣﺎ ﻓﻴﻬﺎ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻥ ﻳﻜﺘﺐ ﻛﻞ ﻣﻮﻟﻮﺩ ﺑﻨﻰ ﺍﺩﻡ ﻓﻰ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﻓﻴﻬﺎ ﺍﻥ ﻳﻜﺘﺐ ﻛﻞ ﻫﺎﻟﻚ ﻣﻦ ﺑﻨﻰ ﺍﺩﻡ ﻓﻰ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﻓﻴﻬﺎ ﺗﺮﻓﻊ ﺍﻋﻤﺎﻟﻬﻢ ﻭﻓﻴﻬﺎ ﺗﻨﺰﻝ ﺍﺭﺯﺍﻗﻬﻢ - ﻓﻘﺎﻟﺖ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎ ﻣﻦ ﺃﺣﺪ ﻳﺪﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺇﻻ ﺑﺮﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ؟ ﻓﻘﺎﻝ : ﻣﺎ ﻣﻦ ﺃﺣﺪ ﻳﺪﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺇﻻ ﺑﺮﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ - ﺛﻼﺛﺎ উম্মুল মোমেনীন মাহবুবায়ে মাহবুবে রাব্বিল আলামিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- রহমতে আলম নূরে মুজাচ্ছম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন হুজুর পাক রাউফুর রাহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আয়েশা (রা:) কে জিজ্ঞেস করলেন- হে আয়েশা! শাবান মাসের মধ্য রাতের মর্যাদা ও বুযুর্গী সম্পর্কে তুমি কি জান? তিনি আরজ করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতের কি মর্যাদা রয়েছে? আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন- আগামী এক বছরে কতজন আদম সন্তান ভূমিষ্ট হবে এবং কতজন আদম সন্তান মৃত্যুবরণ করবে তা এ রাত্রে লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ রাত্রিতে তাদের আমল মহান আল্লাহর দরবারে উপস্থাপন করা হয় এবং তাদের রিযিক অবতীর্ণ কিংবা নির্ধারণ করা হয়। অত:পর হযরত আয়েশা (রা:) বললেন, ইয়া রাসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “আল্লাহর রহমত ছাড়া কারো পক্ষে কি জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত ও একান্ত অনুগ্রহ ছাড়া কারো পক্ষে জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়। এ কথাটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার বললেন। (ফাজায়েলুল আওকাত এর হাদীস নং ২৬ এ হাদীসটি রয়েছে) গাউসূল আজম শেখ সৈয়্যদ আবদুল কাদের জিলানী (র:) তদ্বীয় “গুনিয়াতুত ত্বালেবীন” নামক কিতাবে উল্লেখ করেন : হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন- আল্লাহর হাবীব রাউফুর রাহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমান শাবানের মধ্যবর্তী রাতে হযরত জিব্রাইল (আ:) আমার নিকট এসে বললেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজ আপনার মাথা মোবারক আকাশের দিকে উত্তোলন করুন- কেননা আজ বরকতের রাত। আমি জিজ্ঞেস করলাম- কেমন বরকত? উত্তরে হযরত জিব্রাইল (আ:) বললেন- এই রাতে আল্লাহ পাক তিনশত রহমতের দরজা খুলে দেন। মুশরিক, যাদুকর, গণক, সর্বদা মদ্য পাণকারী, ব্যভিচারী এবং সুদখোর ব্যতীত সকলকে আল্লাহপাক ক্ষমা করে দিবেন। (গুনিয়াতুত্বালেবিন- ৫২৭ পৃষ্ঠা) দলীল নং-০৪ সিহাহ্ সিত্তার অন্যতম হাদীসগ্রন্থ জামে তিরমিজি শরীফ ১ম খন্ড ৯২ পৃষ্ঠায় একটি অধ্যায় রয়েছে ﺑﺎﺏ ﻣﺎ ﺟﺎﺀ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ সেখানে হযরত উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা (রাঃ) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন- এক রজনীতে আমি দয়াল নবী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিছানায় পেলাম না। এই জন্য তাঁর সন্ধানে বেরিয়ে পড়লাম। তারপর আমি জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে নবীজিকে আকাশের দিকে মাথা উঠানো অবস্থায় দেখতে পেলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, হে আয়েশা! তুমি কি এ ধারণা করছ যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার উপর অবিচার করেছেন? হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বললেন; আমি এমন ধারণা করিনি, ভেবেছিলাম আপনি আপনার অন্য কোন বিবির নিকট গমন করেছেন। তখন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমালেন নিশ্চয় আল্লাহ পাক শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত্রে প্রথম আকাশে তাজাল্লী ফরমান- অত:পর তিনি (আল্লাহ জাল্লাশানুহু) বনী কালব গোত্রের:মেষের পশম সমূহের চেয়েও বেশী লোকের গুনাহ ক্ষমা করেন।” উল্লেখ্য যে, এই বনী কালব এর মেষের সংখ্যা ছিল ৩০,০০০। এছাড়াও হাদীসটি যেসব গ্রন্থে বর্ণিত আছে- “মুসনাদে আহমদ” ১৮তম খন্ড, পৃ.-১১৪, হাদীস নং-২৫৯৬, (২১ টি হাদীস রয়েছে)। “মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা” ১০ম খন্ড, পৃ.-৪৩৮, হাদীস নং-৯৯০৭। “শরহুস্সুন্নাহ” ৪র্থ খন্ড, পৃ.-১২৬, হাদীস নং-৯৯২। “আত তারগীব ওয়াত তারহীব” ৪র্থ খন্ড, পৃ.-২৪০, হাদীস নং-২৪। “আল মুনতাখাব মিনাল মুসনাদ” ১ম খন্ড, ১৯৪ পৃষ্ঠা।) দলীল নং-০৫ সিহাহ্ সিত্তার অন্যতম হাদীসগ্রন্থ ইবনে মাজাহ শরীফের ১০০ পৃ: এবং মিশকাত শরীফের ১১৫ পৃষ্ঠায় আমীরুল মোমেনীন, শেরে খোদা, মুশকিল কোশা হযরত আলী (ক:) হতে মারফু মুত্তাছিল সনদে রেওয়ায়েত করেন- যে, আল্লাহর হাবীব নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ ফরমান-
ﺍﺫﺍ ﻛﺎﻧﺖ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ - ﻓﻘﻮﻣﻮﺍ ﻟﻴﻠﻬﺎ ﻭﺻﻮﻣﻮﺍ ﻳﻮﻣﻬﺎ ﻓﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻳﻨﺰﻝ ﻓﻴﻬﺎ ﻟﻐﺮﻭﺏ ﺍﻟﺸﻤﺲ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ - ﻓﻴﻘﻮﻝ ﺍﻻ ﻣﻦ ﻣﺴﺘﻐﻔﺮﻟﻰ ﻓﺎﻏﻔﺮﻟﻪ ﺍﻻ ﻣﺴﺘﺮﺯﻕ ﻓﺎﺭﺯﻗﻪ ﺍﻻ ﻣﺒﺘﻠﻰ ﻓﺎﻋﺎﻓﻴﻪ ﺍﻻ ﻛﺬﺍ ﻛﺬﺍ ﺣﺘﻰ ﻳﻄﻠﻊ ﺍﻟﻔﺠﺮ - যখন শাবানের ১৫ তারিখের রাত্র আগমন করে তখন তোমরা রাত্র জাগরণ করতঃ মহান আল্লাহ তায়ালার এবাদত বন্দেগী কর এবং এর পূর্ববর্তী দিনে (১৫ তারিখে) রোজা পালন কর। কেননা চৌদ্দ তারিখের সূর্য অস্থ যাওয়া তথা ১৫ তারিখের রাত্র আরম্ভ হওয়ায় সাথে সাথে মহান আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে স্বীয় তাজাল্লী প্রকাশ ফরমান। অর্থাৎ দুনিয়া বাসীর প্রতি বিশেষ রহমতের দৃষ্টি দান করতঃ দয়াপূর্ণ কুদরতী আওয়াজে আহ্বান করে থাকেন। আমার বান্দাদের মধ্যে কেউ আজকের এ পবিত্র রাত্রে আমি আল্লাহর দরবারে নিজের কৃত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। রুজি-রিজিক চাওয়ার আছ কি? আমি তোমাদের চাহিদা অনুপাতে রিজিক দানের ফয়সালা করে দিব। কোন বিপদগ্রস্থ লোক বিপদ মুক্তির জন্য প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তোমাদের বিপদ দূরীভূত করে দিব। এমন আরো বিষয়ে কেউ প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তা সবই তোমাদেরকে দান করব। সময় নিয়ে পোস্ট টি পড়লেন, এজন্য আন্তরিক অভিন্দন
বন্ধু ভালো থেকো, আশা করি পরবর্তী পোস্ট টি ও পড়বেন
আজ এই পর্যন্ত রইল, সকলেই ভালো থাকবেন, তবে, আমার ফেইসবুক page
এ একটা

দিবেন, এবং পোস্টগুলো আপনার টাইম লাইন এ, shaire করবেন প্লিজ, কোন সমস্যা হলে আমাকে ফেইসবুকে

অথবা সরাসরি

0 Reviews:
Post Your Review